প্রকাশিত: Mon, Dec 26, 2022 3:37 PM
আপডেট: Wed, May 14, 2025 11:22 AM

প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হলেও বিশ্বকে পড়তে হবে!

গোলাম সারোয়ার

লিও তলস্তয়ের সন্তান ছিলো তেরোজন। যারা বলেন, সংসার করলে শিল্প-সাহিত্যে সময় দেওয়া যায় না, তাদের জন্য প্রতি উত্তর হলো তলস্তয়। তলস্তয়কে বলা যায় পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিশক্তি হিসেবে রুশ সাহিত্যের শেক্সপিয়র। তলস্তয়ের সময়ে রাশিয়ার সম্পদ ছিলো না, পারমানবিক বোমা ছিলো না, সে সময় এতো প্রকাণ্ড রেলপথ ছিলো না, এতো মসৃণ রাজপথ ছিলো না, গ্যাস ছিলো না, আলো ছিলো না, আরামদায়ক সোফা ছিলো না কিংবা ঈর্ষণীয় আসবাব ছিলো না। কী ছিলো তলস্তয়ের আগে-পরের যুগে? ছিলো মোহগ্রস্ত যুবকদের চোখ এবং তাঁদের অ্যাক্টিভ মগজ। কারা তাঁরা? আলেকজান্ডার পুশকিন, গোগল, ইভান তুর্গেনেভ, দস্তয়ভস্কি, ফিওদর মিখাইলভিচ, আন্তন চেখভ এবং ম্যাক্সিম গোর্কি। এগুলো বোমা নয়, বরং বোমার চেয়েও বেশি ছিলো। পৃথিবী শাসন করতে বোমা হয়তো লাগে, তার চেয়ে বেশি লাগে মগজ, অ্যাক্টিভ মগজ। রাশিয়ার এসব সম্পদ ছিলো তখন। এখন নেই। রাশিয়ার নেই, আমাদেরও নেই। পৃথিবী শাসন করতে প্রকাণ্ড ভূখণ্ডের মালিক হতে হয় না। বড় ভূখণ্ড দিয়ে জগৎ শাসন করা গেলে পৃথিবী শাসন করতো ভারত, চীন, রাশিয়া। কিন্তু জগৎ সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শাসন করে গেছেন রোমানরা। আমেরিকা, কানাডা, লাতিন আমেরিকা তো আবিষ্কার হয়েছে এইতো মাত্র পাঁচশ ত্রিশ বছর আগে ১৪৯২ সালে। 

রোমান সাম্রাজ্য পৃথিবী শাসন করে প্রায় বারশ বছর। অথচ রোম যে ইতালির রাজধানী তার আয়তন প্রায় তিন লাখ বর্গ-কিলোমিটার। মানে বাংলাদেশের দুই গুণের মতো আয়তন হবে। অথচ সে সময়ের ভারতবর্ষের আয়তন ছিলো বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ত্রিশ-গুণ। তার মানে কী? সাইজ ম্যাটার না, ম্যাটার হলো কোয়ালিটি। নেপোলিয়ান বোনাপার্টের যে ফ্রান্স পৃথিবীর নেতৃত্ব দেয় তাদের আয়তন সাড়ে ছয় লাখ বর্গকিলোমিটার থেকে কম। মানে বাংলাদেশের চারগুণের মতো হবে। নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে পরাজিত করে পৃথিবীর নেতৃত্ব নেওয়া ব্রিটিশদের আয়তন মাত্র দুই লাখ ত্রিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মতো। মানে বাংলাদেশের দেড়গুণের মতো মাটি ছিলো তাদের। সেই মাটির মালিকেরা পৃথিবীর প্রায় সাড়ে তিন কোটি বর্গকিলোমিটার ভূমির ওপর কর্তৃত্ব করে যায় প্রায় পৌনে দু’শ বছর। কী দিয়ে করেছেন তারা? মাথা দিয়ে। মাথা কি আমাদের নেই? থাকার কথা। আমরা পারছিনা? সংসারের চাপ, নাকি রাষ্ট্রের বাঁধা? এটি সবদেশে সব যুগেই থাকে। তবুও কেউ কেউ এগিয়ে যায়। তলস্তয় দিয়ে শুরু করেছি আজ, তাই তলস্তয় দিয়েই শেষ করি। 

যাঁর তেরোটি সন্তান হয় তাঁর নিশ্চয় স্ত্রীর সাথে অনেক লম্বা ভালোবাসার সম্পর্কের ইতিহাস আছে। তবুও তো কথা থাকে। তলস্তয়ের স্ত্রীর সাথেও তাঁর মত-দ্বিমত ছিলো, ঝগড়াও ছিলো এবং আশ্চর্য ব্যাপার হলো পৃথিবী বিখ্যাত এই বুদ্ধিজীবী বিরাশি বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করেন ঝগড়া থেকে বাঁচতে। আজ আমাদের তরুণদের প্রতি আমাদের আহ্বান হলো, আমরাও তো আর পারলাম না সমাজটা পরিবর্তন করতে। আপনাদের পারতে হবে। প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হলেও বিশ্বকে পড়তে হবে। শিল্প-সাহিত্যের সাথে থাকতে হবে এবং প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা করে হলেও লিখতে হবে। মনে রাখবেন, পৃথিবী পরিবর্তন করে স্টোরি। যার স্টোরি টিকবে সেই জগতে টিকে থাকবে, সেই জগতে নেতৃত্ব দিবে। লেখক : কলামিস্ট